অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস শুধুমাত্র একটি মন্দিরের শিলান্যাস নয়, লিখেছেন গিয়াসুদ্দিন

রামমন্দিরের শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সংবিধানকে আঘাত করলেন। রাজা বাদশার শাসনে বা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি আজকের এই গণতান্ত্রিক শাসনে হওয়া কাম্য নয়। 'ইতিহাস সংশোধন করার' চেষ্টা ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনবে।

অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস শুধুমাত্র একটি মন্দিরের শিলান্যাস নয়   

গিয়াসুদ্দিন

১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বিতর্কিত বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ধ্বংসকাণ্ডে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদেরই একজন গত ৫ই আগষ্ট রামমন্দিরের শিল্যান্যাস করলেন। বলা বাহুল্য যে তিনি নরেন্দ্র মোদি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ৬ই ডিসেম্বর ধ্বংসকাণ্ড সংগঠিত করার নেতৃত্ব যাঁরা করেছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন জনপ্রিতিনিধি। অর্থাৎ সংবিধান মেনে চলার ও তাকে রক্ষা করার শপথে আবদ্ধ মানুষ। কিন্তু সবাই সেদিন সংবিধানকে অমান্য, অগ্রাহ্য ও পদদলিত করেছিলেন হেলায় এবং সচেতনভাবেই। তাঁদের বিরুদ্ধে তাই ফৌজদারি মামলা হয়েছিলো যা আজও চলছে। অথচ গত ৫ই আগষ্ট সেই বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপরেই হলো ভূমিপূজন এবং রামমন্দির নির্মাণের শিল্যান্যাস। আপাতদৃষ্টিতে এসব হলো সংবিধানের উল্লঙ্ঘন না করেই। আপাতদৃষ্টিতে এজন্যে যে, বিতর্কিত জায়গাটিতে রামমন্দির নির্মাণের বৈধতা রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের একটি বিতর্কিত রায়ে। আদালত রায় যাই দিক না কেন, কিন্তু বস্তবটা হলো এই যে, উক্ত বিতর্কিত জায়গাতেই একটি আস্ত মসজিদ ছিলো যেটা সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির লোকেরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। এ রকম কোনো জায়গায় মন্দির কিংবা অন্য যে কোনো প্রকার ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ করা ভারতের সংবিধানের আদর্শের পরিপন্থী ভারতের সংবিধানে সকল নাগরিকের নিজের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার অধিকার স্বীকৃত এটা ঠিক, কিন্তু তাই বলে কি রাষ্ট্রর পক্ষে ধর্ম পালন করা কিংবা ধর্মীয় আচরণ করা সংবিধানের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? না, রাষ্ট্র তা করতে পারে না, কারণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকে না। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদুয়ারা ইত্যাদি সব ধরণের ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ ও সেগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করা থেকে বিরত থাকা। তাই মন্দির নির্মাণে কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদি ভূমিকা রাখতেই পারেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না।    

অতীতের ত্রুটি ভুল-ভ্রান্তিগুলো সংবিধান লঙ্ঘন করার লাইসেন্স হতে পারে না

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী পারিষদের সদস্যগণ এবং শাসকদলের নেতারা যখনই সংবিধানকে লঙ্ঘন কিংবা সংবিধানের আদর্শের পরিপন্থী কোনো কাজ করেন তখনই তাঁরা সেই কাজগুলিকে বৈধতা দিতে অতীতের শাসকবর্গের অনুরূপ কাজের নিদর্শনগুলিকে তুলে ধরেন। এখন যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে ভূমিপূজন এবং রামমন্দিরের শিল্যানাস করাকে বৈধতা দেবার জন্যে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতির রাজেন্দ্র প্রসাদের সোমনাথ মন্দিরের দ্বার উদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার দৃষ্টান্তকে তুলে ধরা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি হিসাবে রাজেন্দ্র প্রসাদের ঐ অনুষ্ঠানে সেদিন অংশ নেওয়া যেমন সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ ছিলো না, তেমনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদিরও রামমন্দিরের জন্যে ভূমিপূজা ও শিল্যান্যাস করা অনুরূপভাবে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ হতে পারে না। অতীতে একজন রাষ্ট্রপতি ভুল করেছেন বলে এখন প্রধানমন্ত্রী তা করতেই পারেন – এটা বিজেপির হাস্যকর ও শিশুসুলভ দাবি।  বাবরি মসজিদ ধাংসকাণ্ডকেও তারা একই যুক্তিতে (অপযুক্তিতে) যৌক্তিক ও ন্যায় কাজ বলে মনে করে, যেহেতু মুসলিম শাসকরা ভারতে অতীতে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মুসলিম শাসকরা ছিলো বিদেশি এবং সেটা ছিলো সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের যুগ। সে যুগে মুসলিম শাসকরাই কেবল ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় ভাঙে নি, খ্রিস্টান সম্রাট ও হিন্দু রাজারাও তেমনি অনুরূপ কাজ করেছিলেন। কিন্তু এটাতো গণতন্ত্রের যুগ, যুগে কেউ কারও ধর্মাচারণে হস্তক্ষেপে ও বাধা দিতে পারে না। তাই অতীতে একদা মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানো হয়েছিলো বলে সেটা এ যুগে মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ করার লাইসেন্স হতে পারে না।       

কেন্দ্রীয় সরকার আসলে অন্য এক সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আস্থাশীল

নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতারা খুব ভালো করেই জানেন যে, অতীতের দোহাই দিয়ে বর্তমান সময়ে সংবিধানের আদর্শের পরিপন্থী কাজ করা যায় না। তবু তারা তাদের সমস্ত বেআইনী ও অসাংবিধানিক কার্যকলাপকে ঢাকার জন্যে বারবার অতীতের উদাহরণ তুলে ধরেন। সেটা করেন তাদের আসল অভিপ্রায়কে আড়াল করার জন্যে। শাসকদল আসলে ভারতের বর্তমান সংবিধানের প্রতি আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল নয়। কিন্তু যেহেতু বিজেপির নেতারা এই সংবিধান মেনেই জনপ্রিতিনিধি হয়েছেন এবং সরকার তৈরি করেছেন, তাই প্রকাশ্যে তাদের পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয় যে তারা বর্তমান সংবিধানের প্রতি নয়, অন্য সংবিধানের প্রতি তাদের আস্থা ও আনুগত্য রয়েছে। আইনত বিজেপির কোনো মন্ত্রী ও সাংসদ সংবিধানের পরিপন্থী কথা বলতে পারেন না তবুও অনেক মন্ত্রী ও সাংসদের মুখে অহরহ তেমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রায়ই উস্কানিমূলক মূলক বিবৃতি দেন। যেমন প্রায়শই তাদের মুখে এ কথা শোনা যায় - ভারতের মুসলিমরা ভারতে কেন থাকবে? মুসলিমরা তো ভারত ভেঙে তৈরি করেছে পাকিস্তান, সুতরাং তাদের পাকিস্তানই তাদের দেশ, চলে যেতে হবে তাদের সেখানেই। আর যদি একান্তই তারা ভারতে থাকতে চায়, তবে হিন্দুদের অধীনতা মেনে থাকতে হবে। মুসলিমদের উদ্দেশ্যে এ শ্লোগানও এক সময় হরদম তাদের মুখে শোনা যেত - হয় ভারত ছাড়ো, না হয় কোরআন ছাড়ো। এ সব সংবিধান বিরুদ্ধ ভয়ঙ্কর কথা প্রমাণ করে তারা ভারতে কোন ধরনের সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।      

রামমন্দিরের শিল্যানাস করে প্রধানমন্ত্রী জানিয় দিলেন হিন্দুরাষ্ট্রই তাঁর লক্ষ্য

 

 

শিল্যানাসের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘এত দিনে রামজন্মভূমির মুক্তি ঘটল ...  এত দিন তাঁবুতে মাথা গুঁজে ছিলেন রামলালা। এ বার তাঁর জন্য সুবিশাল মন্দির নির্মিত হবে ...  সরযূ নদীর তীরে সূচনা হল স্বর্ণযুগেরতিনি আরও বলেন, ‘‘এই রামমন্দির ভারতের সংস্কৃতির আধুনিক প্রতীক। আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাবনার প্রতীক।’  তিনি ৫ই আগষ্টকে ১৫ই আগষ্টের সঙ্গে সমতুল্য বলেছেন। ১৫ই আগষ্টের ভারতের স্বাধীনতা দিবসটি হলো    ভারতীয়দের জন্যে বৃটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্তির দিবসও বটে।। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য খোলসা করেন নি ৫ই আগষ্ট কাদের কাছ কাদের মুক্তির দিবস। তিনি খোলসা না করলেও কী বলতে চেয়েছেন তা কারও কাছে অবোধগম্য বা অস্পষ্ট থাকে নি। রামমন্দিরকে ভারতীয় সভ্যতার, সংস্কৃতির ও জাতীয়তাবোধের প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা বলার সময় তিনি আবেগকে সংযত রাখতে পর্যন্ত পারেন নি। সে সময় ভাষণ থামিয়ে তিনি নিজ কণ্ঠেই ‘জয় শ্রী রাম’-এর জয়ধ্বনি দেন। সেই শ্লোগানে সবাইকে গলা মেলাতেও বলেন। ভাষণও শেষ করেন রাম-সীতার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে। মোদিজি তাঁর ভাষণে আরও স্পষ্ট করে যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, হিন্দুত্বই হলো ভারতের জাতীয়তা আর হিন্দুত্বের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতীয়দের সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিকড়। তিনি বলেছেন যে ভগবান রামচন্দ্রই হবে ভারত রাষ্ট্রের আদর্শ আর রামরাজ্য স্থাপন করাই হলো তাঁর মূল গন্তব্য। খোলাখুলি না বললেও তিনি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রামমন্দির নির্মাণের শিল্যানাসের মাধ্যমে আসলে তিনি হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণেরই শিল্যানাস করলেন। প্রধানমন্ত্রীর অন্তরের শ্লোগানজয় শ্রী রামবর্তমানে হিন্দুত্ববাদীদের একটি শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠেছে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলিমদের উপর অত্যাচার চালানোর জন্যে সুতরাং তাঁর স্বপ্নের সেই রাষ্ট্রে যে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান হবে না তা বলাই বাহুল্য।                          

ইতিহাস সংশোধন করার চেষ্টা ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনবে

বাবরি মসজিদকে ভাঙার পর পরই সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদের কণ্ঠে কাশি ও মথুরার মসজিদ ভেঙে মন্দির উদ্ধার করার আওয়াজ/হুঙ্কার শোনা গিয়েছিলো। আওয়াজ উঠলেও সেটা নিয়ে কোনো অভিযান তখন হয় নি। কিন্তু ইস্যুটি যে তারা পরিত্যাগ করে নি তা স্পষ্ট হলো রামমন্দিরের শিল্যানাসের পর। শিল্যানাসের অনুষ্ঠানে শেষ হতেই সঙ্ঘ পরিবার পুনরায় কাশি-মথুরার ইস্যুতে সরব হলো। সরব হয়েছে ফতেপুর সিক্রি নিয়েও। একদা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদও দখল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধিয়েছিলো তারা। বাধাবার চেষ্টা করেছিল হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও। ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধূলিস্যাত করার পরও চারিদিকে দাঙ্গা বেধে গিয়েছিলো যাতে বহু প্রাণহানি হয়েছিলো। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিলো বাংলাদেশে। সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নেমে এসেছিলো ভয়ঙ্কর আক্রমণ। অসংখ্য মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া, অনেক হিন্দু মহল্লা লুট করার পর জ্বালিয়ে দেওয়া, বহু হিন্দুকে হত্যা এবং হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করার বর্বর ও নৃশংস ঘটনা ঘটেছিলো। সেই বর্বর ঘটনার জীবন্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন তসলিমা নাসরিন ‘লজ্জা’ নামক একটি উপন্যাসে।   

সঙ্ঘ পরিবারের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিলো রামমন্দিরটি ধ্বংস করে সেখানে বাবরি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিলো। সঙ্ঘ পরিবার কিন্তু তাদের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ আদালতে দেখাতে পারে নি। আদালতকে তারা বলেছে ওটা তাদের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসকে সত্যে পরিণত করার জন্যেই ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারা ব্যাপক সংখ্যক হিন্দু করসেবক সমবেত করে মসজিদটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই কদর্য ঘটনার ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ৯ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট যুক্তি, তথ্য ও প্রমাণ ছাড়াই হিন্দুদের বিশ্বাসকেই মান্যতা দিয়েছিলো। সেই রায়ে গোটা বিশ্ব সেদিন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলো। গণতন্ত্রের পিলে চমকে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেদিন পৌরাণিক ও কাল্পনিক রামকে কার্যত ঐতিহাসিক রামের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিলো। সেই বিতর্কিত রায়কে হাতিয়ার করে বিতর্কিত জায়গাতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রধানমন্ত্রী এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ঝাঁপিয়ে পড়লো রামমন্দির নির্মাণের কাজে। গত ৫ই আগষ্ট তারই প্রথম ধাপের কাজের সুচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  

ধরা যাক তর্কের খাতিরে যে রামমন্দির ভেঙেই বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিলো। কিন্তু তখনকার যুগ তো সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের যুগ। সে যুগে রাজা-সম্রাটদের ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় ভেঙে নিজ ধর্মের উপাসনালয় নির্মাণ করাই ছিলো দস্তুর। কিন্তু এ যুগ তো গণতন্ত্র যুগ যে যুগে রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্য হলো সমস্ত  মানুষের ধর্মাচারণের অধিকার সুরক্ষিত রাখা। এ যুগে ভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ের জায়গায় শাসক দলের ধর্মীয় উপাসনালয় তৈরি করা রাষ্ট্রের কাজ নয়। ফলে অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রই এখন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলির সুরক্ষা দেয়, যদিও বহুলাংশেই তারা সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বহস্তে বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর রামমন্দিরের শিল্যানাস করলেন! এ কিসের বার্তা? এটা কি ভারতের ইতিহাসের ত্রুটি সংশোধনের ভয়ঙ্কর কোনো বার্তা?            

ধর্মীয় মৌলবাদীরা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো সাধারণত ইতিহাসের ত্রুটি সংশোধন করার দাবি করে থাকে। এটা একটা বিপজ্জনক প্রবণতা, কিন্তু এর অনিষ্ট করার ক্ষমতা সীমিত। কারণ ধর্মীয় মৌলবাদীদের এই প্রবণতা রাষ্ট্র দমন করতে সক্ষম। কিন্তু রাষ্ট্র যদি স্বয়ং এরূপ কাজ করতে চায় তবে তা তো মানব সমাজের চরম সর্বনাশ ডেকে আনবে। কেননা দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশেও তার যে ব্যাপক ও তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে তা মোকাবিলা বা দমন করা হবে দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমরা স্মরণ করতে পারি বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর বাংলাদেশে কী ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো এবং তার জন্যে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের কী নিদারুণ মাশুল গুণতে হয়েছিলো তার কথা।  

(মোদিজির ছবি এবং তাঁর নিজ কণ্ঠেই ‘জয় শ্রী রাম’-এর জয়ধ্বনির লিংক - https://www.anandabazar.com/national/in-ayodhya-narendra-modi-comes-back-to-the-track-of hinduism-more-strongly-dgtlx-1.1185971)  

 

 

    

 

                                        

                                     

 

  

 

 

    

About author
Generic placeholder image
আমরা: এক সচেতন প্রয়াস
AAMRA is an amalgamation of multidisciplinary team of researchers and activists erstwhile worked as an assemblage of movement, research and activism. Popular abbreviation of AAMRA is, An Assemblage of Movement Research and Appraisal.
Do you want to get informed about new articles?

Related articles
Most Viewed
0 Comments
Leave a reply